পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) তত্ত্বাবধানে রাখার দাবি জানিয়েছেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। বৃহস্পতিবার (১৫ মে) ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগর সফর করে তিনি ইসলামাবাদের ‘পারমাণবিক অস্ত্র’ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর উদ্দেশে রাজনাথ বলেন, ‘বিশ্ব জানে যে, আমাদের সেনাবাহিনীর লক্ষ্য সুনির্দিষ্ট। আজ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের অঙ্গীকার কতটা দৃঢ়- এটা এই সত্য থেকে দেখা যায় যে, আমরা তাদের (পাকিস্তানের) পারমাণবিক ব্ল্যাকমেইলের পরোয়াও করিনি। পাকিস্তান কতটা দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে ভারতকে হুমকি দিয়েছে, তা পুরো বিশ্ব দেখেছে।’
ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আজ শ্রীনগরের মাটি থেকে, আমি এই প্রশ্নটি তুলতে চাই: এমন একটি দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং দুর্বৃত্ত জাতির হাতে কি পারমাণবিক অস্ত্র নিরাপদ? আমি বিশ্বাস করি যে, পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার তত্ত্বাবধানে রাখা উচিত।’
রাজনাথ আরও বলেন, ‘জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণ সম্পূর্ণ ঐক্যের সাথে পাকিস্তান এবং সন্ত্রাসবাদের প্রতি তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। আমি জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণকে অভিনন্দন জানাই। আমি সেই শক্তি অনুভব করতে পেরেছি, যা শত্রুকে ধ্বংস করেছে। আপনি যেভাবে সীমান্তের ওপারে পাকিস্তানি পোস্ট এবং তাঁতশিল্প ধ্বংস করেছেন, শত্রুরা তা কখনই ভুলতে পারবে না।’
আইএইএ-‘IAEA’ হলো ভিয়েনা-ভিত্তিক জাতিসংঘের একটি নজরদারি সংস্থা, যা পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ কি না তা নিশ্চিত করার জন্য পর্যবেক্ষণ করে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা বয়েছে, ১৯৯৮ সালে পরস্পরের বিরুদ্ধে পারমাণবিক পরীক্ষা চালানোর পর ভারত ও পাকিস্তান পরমাণু শক্তিধর হয়ে ওঠে। তাদের দশকের পর দশক ধরে চলা ‘শত্রুতা’ বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল এই অঞ্চলকে- সবচেয়ে বিপজ্জনক পারমাণবিক সংঘর্ষস্থলে পরিণত করেছে।
দক্ষিণ এশীয় প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে সর্বশেষ সামরিক সংঘাত সম্প্রতি উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে যায়। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী জানিয়েছেছিল, তাদের পারমাণবিক অস্ত্র তদারকিকারী একটি শীর্ষ সংস্থা বৈঠক করবে, তাই কিছুক্ষণের জন্য আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল যে, পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডারও এর সাথে সম্পর্কিত হতে পারে। কিন্তু পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, এ ধরনের কোনো বৈঠকের পরিকল্পনা ছিল না।
সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি পাকিস্তানের পারমাণবিক বিকল্পের ইঙ্গিত দেওয়ার একটি উপায় হতে পারে, কারণ কোনো সংঘাতের ক্ষেত্রে যদি তার অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ে তবে ইসলামাবাদ ‘প্রথমে ব্যবহার’ নীতি গ্রহণ করে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও গত সোমবার বলেছেন, যদি ভারতে নতুন করে আক্রমণ হয়, তাহলে নয়াদিল্লি আবারও ‘সীমান্তের ওপারে সন্ত্রাসীদের আস্তানাগুলোতে’ হামলা চালাবে এবং ইসলামাবাদের ‘পারমাণবিক ব্ল্যাকমেইল’ কাজে দেবে না।
পাকিস্তান মোদির বক্তব্যকে ‘উস্কানিমূলক এবং প্রদাহজনক বক্তব্য’ বলে প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, এটি ‘একটি বিপজ্জনক উত্তেজনার প্রতিনিধিত্ব’ করে।
হিন্দু-সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারত এবং ইসলাম-সংখ্যাগরিষ্ঠ পাকিস্তান অতীতে তিনটি যুদ্ধ করেছে, যার মধ্যে দুটি যুদ্ধ হিমালয় অঞ্চল কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে। তারা উভয়ই অঞ্চলটি সম্পূর্ণরূপে দাবি করে, কিন্তু আংশিকভাবে শাসন করে।
খুলনা গেজেট/এএজে